রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ড ‘নাশকতার’ প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি 

0 ১৪৪

গোলাম আজম খান,

সাম্প্রতিক কালে উখিয়া বালুখালী রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি নাশকতামুলক ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত বলে জানিয়েছেন তদন্ত কমিটি। একই সাথে এই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার বিষয়ে মামলা করে দায়ীদের আইনের আওতায় আনার জন্য সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি। 

রবিবার বিকেলে কক্সবাজার জেলা প্রশাসকের কাছে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের জন্য গঠিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন  জমা দেয়ার পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এই তথ্য জানান তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মো আবু সুফিয়ান। 

তিনি জানান উখিয়ার বালুখালী ১১ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে গত ৫ মার্চের আগ্নিকান্ডের ঘটনাটি ছিল  উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত। ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের মধ্যে  আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গাদের একটি গ্রুপ এই অগ্নিসংযোগ করেছে  বলে প্রমান পেয়েছে তদন্ত কমিটি। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার আগের দিন ঐ ক্যাম্পে গোলাগুলি হয়েছে। মামলা করা হলে ঘটনার গভীরে গিয়ে তদন্ত করলে বেরিয়ে আসবে কারা কিংবা কোন গ্রুপ এই অগ্নিসংযোগের মতো নাশকতা করেছে। তখন জানা যাবে কারা এর জন্য দায়ী। প্রতিবেদনে ঘটনার কারণ ব্যাখ্যার পাশাপাশি ১০টি সুপারিশও করা হয়েছে। বিকেল সাড়ে ৪ টার দিকে সংবাদ সম্মেলন করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান মো. আবু সুফিয়ান।

তিনি জানিয়েছেন, ৪ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে নানা প্রমাণ পত্র হিসেবে ৭৪ টি পৃষ্ঠা সংযুক্ত করা হয়েছে। ৩ দিন ধরে তদন্তকালে তদন্ত কমিটি অনন্ত ৭৫ জনের স্বাক্ষ্য নিয়েছে। তদন্তকালে রোহিঙ্গারা বলছেন এটি পরিকল্পিত নাশকতা। এসব রোহিঙ্গারা যে স্বাক্ষ্য দিয়েছে তাতে ভিন্ন ভিন্ন বক্তব্য এবং ভিন্ন ভিন্ন নাম পাওয়া গেছে । এদের শনাক্ত করা কঠিন। তাই মামলার করার মাধ্যমে এ ঘটনার অধিকতর তদন্ত জরুরি। 

তদন্ত কমিটির প্রধান মো. আবু সুফিয়ান বলেন, গত ৫ মার্চ দুপুর আড়াই টার পর ১১ নম্বর ক্যাম্পের ডি ব্লকে আগুনের সূত্রপাত হয়। কয়েক মিনিটের ব্যবধানে ৪/৫ টি স্থানে আগুন লাগে। এটা নাশকতার প্রমাণ করে। অগ্নিকান্ডের আগের দিন ওই ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। আগুন রোহিঙ্গারা নেভাতে গেলে অনেকেই নিষেধ করেছে, তবে তা রোহিঙ্গাদের প্রাণ বাঁচানোর স্বার্থে। রোহিঙ্গাদের বলা হয়েছে, আগুন নেভানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো জরুরী। 

তদন্ত কমিটি জানায়, ওই দিনের আগুনে ২ হাজা ২০০ ঘর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে  ১৫ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা। আর আহত হয় প্রায় ২ হাজার রোহিঙ্গা। 

প্রতিবেদনে করা সুপারিশ সমুহের মধ্যে রয়েছে, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রতিটি ব্লকের রাস্তা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি চলাচল করতে পারার মতো প্রশস্ত করা যেতে পারে। রাস্তার পাশে পানির চৌবাচ্চা তৈরী, শেল্টারে ত্রিপলের পরিবর্তে আগুন সহিঞ্চু কিছু ব্যবহার,  রোহিঙ্গা ক্যাম্পের জন্য পৃথক ফায়ার সার্ভিস ইউনিট গঠন, ক্যাম্পের অভ্যন্তরে যতত্রত বাজার বসাতে না দেওয়া এবং বড় রাস্তার ধারব্যতীত অন্যস্থানে দাহ্য পদার্থ আউটলেট করা থেকে বিরত, ঘনবসতিপূর্ণ ও অনেক স্থানে যানবাহন চলাচলের ক্ষেত্রে অগম্য বিবেচনায় ক্যাম্পের প্রবেশ মুখে লে-আউট স্থাপন, আগুন লাগলে নেভানোর কাজে রোহিঙ্গাদের স্বতস্ফুর্ত অংশ গ্রহণের জন্য নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা তৈরি। ক্যাম্পের ব্লুকে ব্লুকে ওয়ারলেস টাওয়ার স্থাপন ও ৩৬০ ডিগ্রি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন, এক ক্যাম্প থেকে অপরাধ করে অন্য ক্যাম্পের পালানো রোধে প্রত্যেক ক্যাম্পে নিরাপত্তা বেষ্টনী স্থাপন করা।

প্রেসব্রিফিং কালে তদন্ত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রিপ্লাই করুন

Your email address will not be published.