পেকুয়ায় দালালের ফাঁদে পড়ে সর্বস্ব হারালেন দুই যুবক

0 ১৯৮

নিজস্ব প্রতিবেদক পেকুয়া:
কক্সবাজারের পেকুয়ায় দালাল চক্রের সদস্যরা লিবিয়ায় উন্নত জীবনের প্রলোভন দেখায়। নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা নিয়ে দুই যুবকদের লিবিয়ায় পাঠিয়ে তুলে দেয়া হয় সংঘবদ্ধ মাফিয়াদের হাতে। সর্বশেষ ভুক্তভোগী দালালের মাধ্যমে লিবিয়ায় গিয়ে মুক্তিপণ দিয়ে দেশে আসেন এবং সবকিছু হারিয়ে এখন মানববেতর জীবন যাপন করছেন।
শুক্রবার সকাল ১০টায় প্রতারণার শিকার দুই ভুক্তভোগী যুবক এছারুল হক ও মোজাম্মেল হক যৌথ সংবাদ সম্মেলন করে এমনতাই অভিযোগ করেছেন। সংবাদ সম্মেলনে অভিযুক্ত দালালকে আইনের আওতায় আনার দাবী জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তাদের সাথে ঘটে যাওয়া লোমহর্ষক কাহিনীর বর্ণনা দিয়ে এছারুল হক অভিযোগ করে বলেন, রাজাখালী সুন্দরী পাড়া এলাকার আমান উল্লাহ প্রকাশ গফুর আমাকে লিবিয়ায় ভালো চাকুরী দিবে বলে আমার কাছ থেকে সে ভিসা বাবদ ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা নেয়। টাকা নেয়ার পর গত ২ হাজার ২২ সালের ২ জুলাই আমাকে ঢাকা শাহ আমানত আন্তজার্তিক বিমান বন্দরে পাঠান সেখানেও আমাকে ব্যাপক হয়রানীর শিকার হতে হয় অবশেষে অনেক কষ্ট আর সীমাহীন যন্ত্রনা নিয়ে বিভিন্ন দেশঘুরে লিবিয়ায় পৌছাই সেখানে আমাকে কোনমতে একটি ঘরে বন্দীর মতো অনাহারে অর্ধাহারে থাকতে হয় বেশ কিছুদিন। তারপর শুরু হয় আমার উপর মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন কাজ তো দুরের কথা আমাকে যে শর্ত দিয়ে লিবিয়া নিয়ে যাওয়া হইছিল তা তো দুরে থাক আমাকে তুলে দেয়া হলো তার নিয়ন্ত্রিত অন্য দালালের হাতে। তারা আমাকে সেখানে শারিরিকভাবে মারধর শুরু করে দিনের পর দিন এমনকি তারা আমাকে বিবস্ত্র করে মারধর করতেন এভাবে বাড়িতে ফোন করে করে আমার জীবনের সব কিছু শেষ করে দিয়ে তাদেরকে আরো তিন লক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে কোনমতে প্রাণে বাঁচি।
এদিকে এই টাকার জন্য আমার জীবনের সকল অর্জিত সম্পদ তো বিক্রি করে দিয়েছি এবং আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি এভাবে থাকতে থাকতে সেখানে পরিচিত হয় আমার মতো অন্য দালালের হাতে প্রতারিত হওয়ার পেকুয়া রাজাখালীর মোজাম্মেল হকের সাথে সেও আমার মতো এভাবে প্রতারতি হয়ে ওখানে পড়ে আছে। লিবিয়ায় দালাল আমান উল্লাহ প্রকাশ গফুরের কথা যারাই শুনে তারাই বলে সে তো শীর্ষ মানবপাচারকারী সে লিবিয়ায় বাংলাদেশের মানুষ নিয়ে গিয়ে দালালদের হাতে তুলে দেয় এখানো অনেক মানুষ তার জিম্মিদশায় আছে। এভাবে দীর্ড় ৮ মাস বাঁচার লড়াই করে আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযাগীতায় তিনি দেশে এসেছেন বলে সংবাদ সেেম্মলনে তিনি কেদে কেঁদে বলেন। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই আমান উল্লাহর বিচার দাবি করেন এবং তার আর্থিক ক্ষতিপূরণসহ তার যে ক্ষতি হয়েছে তার বিচার চান।
আয়োজিত ওই সংবাদ সম্মেলনে রাজাখালীর ভুক্তভোগী মোজাম্মেল হক অভিয়োগ করে বলেন, রাজাখালী বকশিয়া ঘোনা এলাকার কালা মিয়ার পুত্র রিদুয়ান আমাকে এছারুল হকের মতো ভালো চাকুরীর প্রলোভন দেখিয়ে লিবিয়া নিয়ে যাওয়ার পূর্বে প্রথম দফায় ৩ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা নেন এবং পরে আমাকে অন্য দালালের হাতে বিক্রি করে দিলে সেখানে আমাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয় আমি বিভিন্ন ব্যাংক ও আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে ঋণ নিয়ে বিদেশে গিয়েছিলাম একটু সুখের আশায় কিন্ত দালাল রিদুয়ান আমার জীবন শেষ করে দিয়েছে। আমাকে সেখানকার মাফিয়াদের দিয়ে নিয়মিত মারধর করাতো অবশেষে আমি সইতে না পেরে আমার মায়ের কাছে ফোন করে আমাদের বসত ভিটা বিক্রি করে মুক্তিপণ হিসেবে আরো ৩ লক্ষ টাকা দিলে আমাকে প্রাণে বেঁচে থাকার সুযোগ পাই। আমি পরে আর্ন্তজাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম) এর সহযাগীতায় দেশে আসি। সংবাদ সম্মেলনে তিনি এই মানবপাচারকারী রিদুয়ানের বিচার দাবি করেন এবং তার সাথে জড়িতদের আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানান। তার মা হোসনে আরা বেগম বলেন, আমার সব শেষ। আজ আমরা পথের ভিখেরী হয়ে গেছি দালাল রিদুয়ানের কারনে তিনি তার সন্তানের সাথে যে এতো অন্যায় করেছে তার শাস্তি ও তাদের দেয়া টাকা ফেরত পেতে আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগীতা কামনা করেন।
সংবাদ সম্মেলনে মোজাম্মেল হকের বন্ধু আজগর আলী বলেন, রিদুয়ানকে টাকা দিয়েছে আমি সাক্ষি শুধু তাই নয় সেখানে মোজাম্মেলের জন্য তিনি টাকা দিয়েছেন বলে জানান। সংবাদ সম্মেলনে এছারুল হকের স্ত্রী বুলবুল ইয়াছমিনসহ দুই পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রিপ্লাই করুন

Your email address will not be published.