গণমাধ্যমবান্ধব রাষ্ট্রপতি পাচ্ছে দেশ

0 ১৯৮

নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন গণমাধ্যমবান্ধব ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। সাংবাদিকতা দিয়েই শুরু হয়েছিল তার কর্মজীবন। সাংবাদিকরা বলছেন, বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালনের সময় তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রেখেছেন।

বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সাবেক সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে উনার খুবই ভালো সম্পর্ক। উনি যখন দুর্নীতি দমন কমিশনে কাজ করতেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হতো।

দৈনিক জনকণ্ঠের নির্বাহী সম্পাদক ওবায়দুল কবির বলেন, তিনি জনকণ্ঠে নিয়মিত লিখতেন। সাংবাদিকতা দিয়েই তার কর্মজীবন শুরু হয়েছিল। পরবর্তী কর্মজীবনেও তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে সম্পর্ক রেখেছেন।

দৈনিক ইত্তেফাকের কূটনৈতিক সম্পাদক মাঈনুল আলম বলেন, নতুন নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি সাংবাদিকবান্ধব। তিনি সাংবাদিকতায় যুক্ত ছিলেন। পাবনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ছিলেন। তিনি পাবনা প্রেসক্লাবের আজীবন সদস্য। পাবনা প্রেসক্লাবের সব সাংবাদিকের সঙ্গে তিনি যোগাযোগ রাখতেন। ওখানকার সব সাংবাদিকদের তিনি অনুপ্রেরণা দিতেন। কর্মসূত্রে আমার সঙ্গে দেখা হলে তিনি এসব কথা জানাতেন।

মাঈনুল আলম আরও বলেন, কর্মসূত্রে উনার কাজ দেখেছি, সততা দেখেছি। সাংবাদিকদের সব সময় আপন ভাবতেন তিনি। কোনো তথ্য জানতে চাইলে সাংবাদিকদের বিশদভাবে সেই তথ্য জানাতেন। খুবই জ্ঞানগর্ভ ব্রিফ দিতেন। সাংবাদিকরা যাতে সঠিক প্রতিবেদন করতে পারেন, সব দিক থেকেই তিনি সেই সহায়তা অব্যাহত রাখতেন।

ডিবিসি নিউজের স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট আদিত্য আরাফাত বলেন, মো. সাহাবুদ্দিন দুদকে কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করার সময় গণমাধ্যমের সঙ্গে সুসম্পর্ক রেখেছিলেন। যেকোনো বিষয়ে তার বক্তব্য চাইলে পেয়েছি। গণমাধ্যমকর্মীরা যাতে দুর্নীতি সংক্রান্ত তথ্য পায় সেজন্য তিনি আন্তরিক ছিলেন। দুদকেও তাকে তার যথাযথ দায়িত্ব পালন করতে দেখেছি। তিনি প্রায়ই বলতেন গণমাধ্যমকর্মীরা দুদকের সহায়ক শক্তি। তিনি দায়িত্ব পালনের সময় গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া অনেক দুর্নীতি সংক্রান্ত সংবাদ অনুসন্ধানের জন্য আমলে নিয়েছেন।

জনতে চাইলে অধুনালুপ্ত বাংলার বাণীর সাবেক ক্রাইম বিটের প্রধান এস এম আবুল হোসেন বলেন, ৭৫’র পূর্ববর্তী সময়ে তিনি রিপোর্টার হিসেবে বাংলার বাণীতে কাজ করতেন। লেখার হাত খুবই ভালো। সবমিলিয়ে খুবই সামাজিক মানুষ ছিলেন।

তিনি বলেন, জুডিশিয়াল পদে থাকাকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে একটি দূরত্ব থাকে। উনার ক্ষেত্রেও সেটি ছিল। সংবাদ কর্মী হিসেবে উনার কাছে কোনো তথ্যের জন্যে গেলে উনি খুবই সহযোগিতা করতেন। তিনি নিজেই পরিচয় দিয়ে বলতেন, আমি একদিন সংবাদকর্মী ছিলাম।

বাংলার বাণীর সাবেক ফটো সাংবাদিক স্বপন সরকার বলেন, উনি বাংলার বাণীর পাবনার প্রতিনিধি ছিলেন।

জানা গেছে, দৈনিক জনকণ্ঠ ও বাংলাদেশ প্রতিদিনসহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে তিনি নিয়মিত কলাম লিখতেন। চলতি বছরের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে জনকণ্ঠে ‘বিজয়ের বেশে ফেরেন বঙ্গবন্ধু’ শীর্ষক কলাম লিখেছেন। ‘এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ’; ‘কূটনৈতিক শোভনীয়তা ও গণমাধ্যম’ ও ‘বাংলাদেশকে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তুলনা নয়’ শীর্ষক কলামও লিখেছেন সম্প্রতি।

মো. সাহাবুদ্দিনের জন্ম ১৯৪৯ সালে পাবনা জেলায়। ছাত্রজীবনে তিনি পাবনা জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি এবং ১৯৭৪ সালে পাবনা জেলা যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭১ সালে পাবনা জেলার স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ছিলেন তিনি এবং মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালে সংঘটিত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর কারাবরণ করেন তিনি।

পেশায় একজন আইনজীবী মো. সাহাবুদ্দিন ১৯৮২ সালে বিসিএস (বিচার) ক্যাডার হিসেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন। ১৯৯৫ সালে জুডিশিয়াল সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব নির্বাচিত হন। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলায় আইন মন্ত্রণালয়ের নিযুক্ত সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি। বিচারকের বিভিন্ন পদে চাকরি শেষে ২৫ বছর পর ২০০৬ সালে জেলা ও দায়রা জজ হিসেবে অবসর নেন।

২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের জনগোষ্ঠীর ওপর যে হামলা হয় এবং হত্যা, ধর্ষণ ও লুণ্ঠনের ঘটনা ঘটে, সেসব ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিশনের প্রধান ছিলেন মো. সাহাবুদ্দিন। এ ছাড়া ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত মো. সাহাবুদ্দিন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সুত্র: সারাবাংলা

রিপ্লাই করুন

Your email address will not be published.