স্থানীয় কৃষকদের উৎপাদিত পণ্যের টেকসই মার্কেট লিংকেজ এবং কৃষকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়েছে। গত সোমবার, ১২ই ফেব্রুয়ারি সকাল ১০ টায় জেলা হর্টিকালচার সম্মেলন কক্ষে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের জেলা, উপজেলার কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন উপজেলা ভিত্তিক দশটি এগ্রিগেশন সেন্টার এর কমিটির সদস্যদের নিয়ে কক্সবাজার চেম্বার অফ কমার্স এবং আন্তর্জাতিক সংস্থা আই,এল,ও এর যৌথ উদ্যোগে টেকসই মার্কেট লিংকেজ,বিপণন এবং কৃষকদের পেশাগত নিরাপত্তা বিষয় দিনব্যাপী কর্মশালায় অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে চেম্বার সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন কৃষি সেক্টর আমাদের অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি। ২০৩০ সালের মধ্যে টেকসই উন্নয়নের লক্ষ্যমাত্রা ( এসডিজি) অর্জন এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা বিনির্মানে সুদূরপ্রসারী কর্মপরিকল্পনা, প্রয়োজন সম্মিলিত উদ্যোগ এবং আন্তরিকতা। যারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমাদের জন্য খাদ্যের যোগান দিচ্ছেন, সেই কৃষকদের পেশাগত নিরাপত্তা নিশ্চিত এর পাশাপাশি তাদের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তির কৌশলও নিশ্চিত করা আমাদের সকলের সামাজিক নৈতিক দায়িত্ব। সেই লক্ষ অর্জনে আমাদের প্রথম প্রয়োজন উপজেলা ভিত্তিক কৃষি পণ্য উৎপাদনের পরিমাণ, চাহিদা ও সরবরাহ এর সঠিক তথ্য। সরকারি, বেসরকারি সংস্থার এবং প্রাইভেট সেক্টর গুলোর মধ্যে সুষ্ঠু সমন্বয়। তিনি আরও বলেন রোহিঙ্গা আগমনের ফলে আমাদের স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রত্যক্ষ পরোক্ষ ভাবে প্রচুর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। অপরদিকে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে রোহিঙ্গাদের দৈনিক খাদ্য সহ অপরাপর চাহিদা মিটাতে প্রতি মাসে আন্তর্জাতিক সংস্থার মেগাশপ গুলোর মাধ্যমে প্রায় ১০মিলিয়ন ডলার সমপরিমান বাজার অর্থনীতির কর্মযজ্ঞ সৃষ্টি হলেও স্থানীয় ব্যবসায়ী, সরবরাহকারী এবং স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পণ্যের বাজার সংযোগ এবং প্রবেশগম্যতা খুবই নগণ্য। এর উত্তরণ এখন সময়ের দাবি। রোহিঙ্গা আগমনে ক্ষতিগ্রস্ত হিসেবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে এই সুযোগ স্থানীয় ব্যবসায়ী ,সরবরাহকারী, স্থানীয় উৎপাদনকারীদের প্রাপ্য। অবশ্যই স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে।
মূল অনুষ্ঠানের শুরুতে আইএলও এর ন্যাশনাল প্রোগ্রাম ম্যানেজার জনাব সিরাজুল ইসলাম বলেন চলমান আই,এস, ই, সি (ইম্প্রবিং স্কিলস অ্যান্ড ইকোনমিক অপরচুনিটিস ফর দা হোস্ট কমিউনিটিস ইন কক্সবাজার) প্রজেক্ট এর চারটি কার্যক্রমের আওতায় মোট চব্বিশ হাজার(২৪০০০) স্থানীয় তরুণদের ট্যুরিজম,কারিগরি, কৃষি সেক্টরসহ বাজার চাহিদার ভিত্তিতে প্রশিক্ষণ,দক্ষতা উন্নয়নে সহযোগিতা প্রদান করবে। তার মধ্যে দু’হাজার(২০০০) জনকে কৃষি খাত সংশ্লিষ্টদের পেশাগত নিরাপত্তা ও স্বাস্থ্য বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবে। আলোচনা সভায় জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মোঃ কবির হোসেন বলেন বর্তমানে সরকারের অগ্রাধিকার ভিত্তিক খাত কৃষি । আগামী স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে প্রযোজন কৃষকদের বহুমাত্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্মার্ট কৃষক সৃষ্টি এবং স্মার্ট বাজার ব্যবস্থাপনা। তিনি কৃষকের পেশাগত নিরাপত্তার উপর গুরুত্ব দিয়ে বলেন, আমাদের অনেক কৃষক ভাইয়েরা জানেন না বা আমলে নেন না যে, সার কোন সময় প্রয়োগ করলে ভালো ফলন হবে এবং পোকামাকড় নিধনের যেই বিষ প্রয়োগ করছেন তার নিরাপদ ব্যবহার এবং রক্ষণাবেক্ষণ কিভাবে করতে হয়। শুধু তাই নয় আবহাওয়ার সতর্ক বার্তা বা পূর্বাভাস অনেকে আমলে না নিয়ে জমিতে চলে যাচ্ছেন যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ । তিনি আরও বলেন,যে কোন কৃষি সংশ্লিষ্ট উন্নয়ন কার্যক্রম এবং পরিকল্পনা এর সাথে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট না করলে টেকসই কৃষি সম্প্রসারণের উদ্যোগ ফলপ্রসু হবে না।
প্রকল্পের সিনিয়র কনসালটেন ডঃ মোসলে সাদেক উনার উপস্থাপনায় আন্তর্জাতিক সংস্থা এফ,এ,ও পরিচালিত তিনটি এগ্রিগেশন সেন্টার এর সার্বিক কার্যক্রম সংক্রান্ত চিত্র তুলে ধরেন। এগ্রিগেশন সেন্টার এর উপকারভোগী/ সদস্যগণ এফএও থেকে কিছু কৃষি যন্ত্রপাতির সুবিধা পেলেও অচিরেই কিছু মৌলিক সমস্যার উত্তরণ প্রয়োজন। তাদের উৎপাদিত / সংগৃহীত কৃষি পণ্য রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মেগা শপের আওতায় এফসিসি ( ফ্রেশ ফ্রুট কর্নার) এ সরাসরি বিক্রি করতে পারছে না। যা মূলত নিদিষ্ট কিছু ভেন্ডর এর মাধ্যমে সরবরাহ হয়ে থাকে। অপরদিকে এগ্রিগেশন সেন্টার এক প্রতিনিধি বলেন নির্দিষ্ট সময়ে এফসিসি থেকে পণ্যের দৈনিক মূল্য তালিকা দেয়া হয় না। তারা দিন শেষে যখন মূল্য তালিকা দেন তখন আর মাঠ থেকে ফসল সংগ্রহ করে সকালে সেন্টারে পৌঁছে দেয়া সম্ভব হয় না। উনারা মনে করেন কিছু পরোক্ষ মধ্যসত্তভোগী এখানে কাজ করছে।তাছাড়া যে সমস্ত এনজিও এফএও এর পার্টনার হিসেবে কাজ করছে তাদের সরবরাহকৃত বীজগুলো মানসম্মত না হওয়ায় ঠিক ভাবে বীজ থেকে চারা গজায় না। বিভিন্ন উপজেলা থেকে আগত এগ্রিগেশন সেন্টার এর অন্যান্য সদস্যগণ বলেন ক্যাম্পের বাইরে যদি এফসিসি বা ফ্রেস ফ্রুট কালেকশন সেন্টার করা গেলে এবং রাস্তায় বিভিন্ন টোল দেয়া থেকে তাদের অববাহতি দিলে তাদের উৎপাদিত পণ্যের যথাযথ মূল্য মূল্য পাওয়ার যাবে। পাশাপাশি স্থানীয় কৃষকগণ কৃষি পণ্য উৎপাদনে আরো আগ্রহী হবেন। এগ্রিগেশন সেন্টারের এক সদস্য বলেন বর্তমানে জেলায় প্রচুর মরিচ এবং টমেটো ফলন হয়েছে যা রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ১০ লক্ষ লোকের চাহিদা মিটিয়ে জেলার বাইরে ও রপ্তানি করা সম্ভব। প্রযোজন সকল অংশীজনের সহযোগিতা।
চেম্বার অফ কমার্স এর সিসিসিআই- আইএলও প্রকল্পের প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর শাহারিয়া পারভীন লকি এর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত কর্মশালায় উপস্থিত থেকে মূল্যবান মতামত রাখেন জাকিরুল ইসলাম উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা টেকনাফ, এ এম, রাশেদ হাসান উপ-পরিচালক হর্টিকালচার সেন্টার, রামু ,মোঃ নিজাম উদ্দিন, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা উখিয়া, তানজিলা রহমান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রামু,মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কক্সবাজার সদর, মোঃ শাহাজান আলী জেলা কৃষি পণ্য মার্কেটিং অফিসার এবং এফএও কর্তৃক পরিচালিত ১০ টি এগ্রিগেশন সেন্টারের সভাপতি ও সচিব বৃন্দ। মতবিনিময় ও কর্মশালায় উপস্থিত থেকে সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করেন আইএসইসি প্রকল্প সহকারী রুবানা হাসান, হুমায়ুন কোবির খান- ন্যাশনাল কমিউনিকেশন অফিসার আইএলও, শাহিনুর রহমান,এন্টারপ্রেনরশিপ কর্মকতা এবং ফাতিমা ইয়াসমিন, আর্থিক ব্যবস্থাপনা কর্মকতা, সিসিসিআই- আইএলও প্রকল্প। অনুষ্ঠান শেষে চেম্বার সভাপতি অংশগ্রহণকারী সবাইকে কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।