নিজস্ব প্রতিবেদক,
প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনে যে দিকে চোখ যায় শুধুই ক্ষত চিহ্ন। মোখার আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে দ্বীপটি। সোমবার সেই তাÐবের ক্ষয়ক্ষতি স্বচক্ষে পরিদর্শন করছেন জেলা প্রশাসকসহ শীর্ষ কর্মকর্তা ও সরকার দলীয় নেতারা। দ্বীপের ক্ষয়ক্ষতি পরিদর্শন এবং দুর্গতদের ত্রাণ দিতে সেখানে যান তারা।
রবিবার ঘূর্ণিঝড় মোখার তাÐবে বঙ্গোপসাগরের বুকে আট বর্গকিলোমিটার আয়তনের দ্বীপ সেন্টমার্টিনে দুই হাজারের বেশি ঘরবাড়ি, দোকানপাট ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সম্পূর্ণ ভেঙে গেছে ১ হাজার ২০০টির বেশি।
দ্বীপের মাঝেরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, দক্ষিণপাড়া, পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়ার অধিকাংশ কাঁচা ঘরবাড়ি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। অনেকে থাকছেন খোলা আকাশের নিচে।
দ্বীপের প্রধান সড়ক জেটি থেকে নেমে বাজার হয়ে পশ্চিম পাড়ার সড়কটির বিভিন্ন পয়েন্টে গাছ ভেঙে পড়েছে। সড়ক থেকে গাছ কেটে চলাচল উপযোগী করা হয়েছে। তবে সড়কের দুই পাশে রয়ে গেছে তাÐবের ক্ষতচিহ্ন।
বাজারের ব্যবসায়ী নাহিদ হোসেন জানান, তার মুদির দোকানের অর্ধেক অংশ ভেঙে গেছে। উড়ে গেছে টিন। যা মালামাল ছিল তাও বৃষ্টির পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে।
ব্যবসায়ী আবদুল মালেক জানান, বাজারের অন্তত শতাধিক দোকানপাট নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের সদস্য (মেম্বার) খোরশেদ আলম জানান, চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে স্বেচ্ছাসেবককেরা মিলে সড়কে ভেঙে যাওয়া গাছ সরিয়ে চলাচলের উপযোগী করেছেন।
তিনি জানান, দ্বীপের পশ্চিমপাড়া, উত্তরপাড়া, কোনারপাড়া, গলাচিপা, মাঝেরপাড়া সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব এলাকার মানুষ এখনও খোলা আকাশের নিচে রয়েছেন।
পশ্চিম পাড়া এলাকার রফিকুল হুদা নামের এক জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরে জীবিকা পরিচালনা করেন তিনি। স্ত্রী, ৩ সন্তান নিয়ে সংসার। ঘূর্ণিঝড়ের সময় আশ্রয় কেন্দ্রে ছিলেন। ফিরে এসে দেখেন ঘরটি ভেঙে গেছে।
তিনি জানান, পুরো দ্বীপ এখন শ্রীহীন হয়ে উঠেছে। আগের অবস্থায় ফিরতে আরও অনেক সময় লাগবে।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান জানান, দ্বীপের ১২ শত ঘর ও কটেজ ভেঙে গেছে। তার মধ্যে ১ হাজার বসতঘর। এসব ঘরের মানুষ এখন খোলা আকাশের নিচে রয়েছে। জেলা প্রশাসক সোমবার দ্বীপ পরিদর্শনে এসে শুকানো খাবার বিতরণ করেছেন। একই সঙ্গে প্রশাসনের সহযোগিতা ইউনিয়নের পক্ষে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
তিনি জানান, দ্বীপের ২ হাজারের বেশি গাছ ভেঙে গেছে। এর মধ্যে সড়কের গাছ পরিষ্কার করে চলাচল উপযোগি করা হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান জানান, প্রাথমিকভাবে দ্বীপের মানুষকে ত্রাণ সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবারের (১৬ মে) মধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের চূড়ান্ত তালিকা প্রস্তুত হবে। মঙ্গলবার দুপুরের পর থেকে পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তিনি জানান, ঘূর্ণিঝড়ের মুল আঘাত হয়েছে সেন্টমার্টিন দ্বীপে। এর বাইরে টেকনাফ উপজেলায় কিছু ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পরিদর্শনকালে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এড. সিরাজুল মোস্তফা, পুলিশ সুপার মো মাহফুজুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মেয়র মুজিবুর রহমান, বিজিবি, কোস্টগার্ডসহ প্রশাসনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাথে ছিলেন।