নিজস্ব প্রতিবেদক,
সাগরে অবমুক্ত করা হয়েছে ২৭০টি সামুদ্রিক কচ্ছপের বাচ্চা। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পেঁচার দ্বীপ এলাকায় অবমুক্ত করা হয়। এক থেকে তিন দিন বয়সী বাচ্চাগুলো কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের তত্ত্বাবধানে বেসরকারি সংস্থা নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) ইকোলাইফ প্রকল্পের আওতায় কাছিম হ্যাচারিতে বাচ্চাগুলো ফোটানো হয়। চলতি বছর এ পর্যন্ত কক্সবাজারের সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্ট সাড়ে সাত হাজার ডিম দিয়েছে সামুদ্রিক কাছিম।
কচ্ছপের বাচ্চা অবমুক্ত করার সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার, কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম, নেকম-ইকোলাইফ প্রকল্পের উপপরিচালক ড. শফিকুর রহমান প্রমুখ।
ড. শফিকুর রহমান বলেন, ‘কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের পেঁচার দ্বীপ, শীলখালী ও শাহপরীর দ্বীপে তিনটি কচ্ছপের হ্যাচারি থেকে এ বছর ৭ হাজার ৫২৮টি ডিম সংগ্রহ করা হয়েছে। সৈকতের ৫৮টি স্পটে কচ্ছপ ডিম পেড়েছে। আরও কয়েকদিন ডিম দিতে আসবে কচ্ছপ। এরমধ্যে পেঁচার দ্বীপে ১৮টি কচ্ছপ দুই হাজার ৩০টি ডিম দিয়েছে, শীলখালীতে ৯টি কচ্ছপ ১ হাজার ২৩৯টি এবং শাহপরীর দ্বীপে ৩১টি কচ্ছপ ৪ হাজার ২৫৯টি ডিম দিয়েছে।’
শফিকুর রহমান বলেন, ‘ধীরে ধীরে কাছিমের ডিম পাড়ার হার বাড়ছে। গত তিন বছরের তুলনায় এ বছর কচ্ছপ ডিম বেশি দিয়েছে। ২০২২ সালে ৫৪টি স্পটে কচ্ছপ ডিম দিয়েছিল ৫ হাজার ৭৬৩টি। ২০২১ সালে ডিম দেয় ৪ হাজার ৭১৩টি। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটানার হার ৮৬ শতাংশ।’
কক্সবাজার দক্ষিণ বন বিভাগের কর্মকর্তা সারওয়ার আলম বলেন, ‘সামুদ্রিক কচ্ছপের প্রজনন নির্বিঘ্ন করতে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। একইসঙ্গে প্রজনন স্পটগুলোতে মানুষের আনাগোনা নিয়ন্ত্রণে রাখতে এবং কুকুর-শিয়ালের আক্রমণ থেকে রক্ষায় সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।’
বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব) ও সমুদ্র বিজ্ঞানী সাঈদ মাহমুদ বেলাল হায়দার বলেন, ‘অবমুক্ত এই কচ্ছপের বাচ্চাগুলো সাগর-মহাসাগরে ১৯ বছর বিচরণ করবে। দীর্ঘ এই সময় পর আবারও স্ত্রী কচ্ছপগুলো এই সৈকতে ফিরবে, যেখানে তারা জন্ম নিয়েছিল। তবে পুরুষ কচ্ছপগুলো আর ফিরবে না। কিন্তু কক্সবাজারের সমুদ্র উপকূলে নানান কারণে কচ্ছপের প্রজনন স্থান নষ্ট হয়েছে। এ বিষয়ে কাজ করছে সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীরা।’
নেচার কনজার্ভেশন ম্যানেজমেন্টের (নেকম) কক্সবাজারের ব্যবস্থাপক ও গবেষক মোহাম্মদ আব্দুল কাইয়ুম বলেন, ‘পৃথিবীর প্রায় সব সমুদ্রেই কাছিমের বিস্তৃতি রয়েছে এবং এরা বাসা বানানোর জন্য সাধারণত তুলনামূলক উষ্ণ অঞ্চল পছন্দ করে। খাবার গ্রহণ, বিপরীত লিঙ্গের সঙ্গে মিলন থেকে শুরু করে সব আনুষঙ্গিক কাজ সাগরে করলেও ডিম পাড়ার সময়ে স্ত্রী কাছিমকে দ্বীপে আসতেই হয়। এরা ডিম পাড়ার সময়ে সমুদ্র উপকূলের খুব নির্জন স্থানে বেছে নেয়। যদি কোনো প্রতিকূল পরিস্থিতি দেখে তাহলে ডিম পাড়া বন্ধ করে মা কাছিম আবার সাগরে চলে যায়।’
এই গবেষক আরও বলেন, ‘সামুদ্রিক কাছিম ডিম পাড়ার সময় বালিতে গর্ত করে ডিম পাড়ে এবং ডিম বালি দিয়ে ঢেকে দেয়। এরপর ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়ে সাগরে চলে যায়। ডিম থেকে বাচ্চা ফোটার জন্য মোটামুটি একটা নির্দিষ্ট তাপমাত্রার প্রয়োজন পড়ে। গড়ে ৬০ থেকে ৬৫ দিনের মধ্যে ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়।’
‘সমুদ্রের ঝাড়ুদার’ হিসেবে পরিচিত সংকটাপন্ন প্রাণী কাছিম। বিশ্বে মাত্র সাত প্রজাতির সামুদ্রিক কাছিমের দেখা মেলে। এরমধ্যে চার প্রজাতিকেই দুষ্প্রাপ্য হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। এই সাত প্রজাতির মধ্যে আমাদের সৈকতে ‘জলপাই রঙের’ কাছিম বেশি দেখা যায়।