নিজস্ব প্রতিনিধি,
কক্সবাজারের উখিয়ার বালুখালী ৮ নম্বর রোহিঙ্গা শিবিরে দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় নিহত পাঁচজনই মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মির (আরসা) সদস্য।
আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ান এপিবিএনের পক্ষ থেকে এ তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।
এপিবিএন জানিয়েছে – নিহতদের মধ্যে একজন আরসা কমান্ডার, একজন জিম্মাদার ও বাকি তিনজন আরসার সক্রিয় সদস্য।
আশ্রয়শিবিরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ৮ আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যরা নিহত ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্ত করেছেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করে রোহিঙ্গা শিবিরের আইন শৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত ৮ এপিবিএন এর সহকারী পুলিশ সুপার ( অপস অ্যান্ড মিডিয়া) মো. ফারুক আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, মূলত আরসা ও আরএসও সশস্ত্র দুই সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে আধিপত্য বিস্তারের জের ধরে এ ঘটনা ঘটেছে।
উল্লেখ্য, শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোরে উখিয়ার বালুখালী ক্যাম্প-৮ পশ্চিম রোহিঙ্গা শিবিরের বি-১৫, বি-১৬ ও বি-১৭ ব্লক এলাকায় আরসার সঙ্গে মিয়ানমারের আরেকটি সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলে তিনজন এবং উখিয়া আশ্রয়শিবিরের আইওএম হাসপাতালে নেওয়ার পর অপর দুজন মারা যান। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ঘটনাস্থল থেকে এপিবিএন একটি ওয়ান শুটারগান ও একটি গুলি উদ্ধার করে।
নিহতরা হলেন – বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ ডব্লিউ) এইচ-৪৯ ব্লকের বাসিন্দা আনোয়ার ছাদেক (২২), একই আশ্রয়শিবিরের এ-২১ ব্লকের বাসিন্দা মোহাম্মদ হামিম (২১), বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) এইচ-৪২ ব্লকের বাসিন্দা মো. নজিবুল্লাহ (৩২), মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের বাসিন্দা নুরুল আমিন (২২) ও অজ্ঞাতনামা ২৫ বছর বয়সী আরেকজন রোহিঙ্গা।
নিহত পাঁচজনই আরসার সদস্য দাবি করে মো. ফারুক আহমেদ বলেন, গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলে নিহত তিনজনের একজন আনোয়ার ছাদেক ছিলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) এইচ-৪৯ ব্লকের প্রধান জিম্মাদার। নিহত নজিবুল্লাহ ছিলেন বালুখালী আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১০) আরসার ক্যাম্প কমান্ডার। আর নিহত নুরুল আমিন ছিলেন মধুরছড়া আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-৩) বি-১৭ ব্লকের আরসার সক্রিয় সদস্য। নিহত অপর দুজনও আরসা সদস্য বলে জানা গেছে।
তিনি আরও বলেন, এ ঘটনার বিষয়ে গভীর অনুসন্ধান চলছে। পাঁচজন হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ক্যাম্প এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। সন্ত্রাসীদের ধরতে আশ্রয়শিবিরে অভিযান চালানো হচ্ছে।
পাহাড়ি এবং দুর্গম এলাকা হওয়ায় রোহিঙ্গা সন্ত্রাসীরা খুনোখুনির ঘটনা করেই পাহাড়ে গা-ঢাকা দেয় জানিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, নিজেদের মধ্যে আধিপত্য বিস্তার, মাদক ব্যবসা, চাঁদাবাজিসহ নানা বিষয় নিয়ে গোলাগুলি হয় তাদের মধ্যে। এর পরই পুলিশের গ্রেপ্তার এড়াতে পাহাড়ে এবং সীমান্ত এলাকায় চলে যায় এসব সন্ত্রাসীরা।
এপিবিএনের এ সহকারী পুলিশ সুপার বলেন, আরসার সঙ্গে আরএসও-এর বিরোধ দীর্ঘদিনের। আশ্রয়শিবিরের নিয়ন্ত্রণ, আধিপত্য বিস্তার এবং পূর্বশত্রুতার জেরে দুই সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।
ক্যাম্পজুড়ে আতঙ্ক
গোলাগুলিতে একসঙ্গে পাঁচজন আরসা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় রোহিঙ্গা শিবিরজুড়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। উখিয়ার বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮, ৯, ১০, ১১ ও ১২) অন্তত দেড় লাখ রোহিঙ্গার বসতি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন রোহিঙ্গা জানান, বালুখালী আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৮ পশ্চিম) শক্ত অবস্থান গড়ে তোলেন মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা ও রোহিঙ্গা সন্ত্রাসী নবী বাহিনীর প্রধান নবী হোসেন। আরসাকে ঠেকাতে বছরখানেক আগে নবী হোসেনের সঙ্গে হাত মেলায় আরএসও। ক্যাম্পের নিয়ন্ত্রণ নিতে নবী হোসেন বাহিনী ও আরএসও সমর্থক রোহিঙ্গা মাঝিদের অপহরণের পর হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার চেষ্টা চালাচ্ছে আরসা।
বালুখালী রোহিঙ্গা শিবিরের এক রোহিঙ্গা বলেন, আরএসও-এর সঙ্গে গোলাগুলিতে আরসার পাঁচ সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ রোহিঙ্গারা চরম আতঙ্কে ভুগছেন। তাদের আশঙ্কা, প্রতিশোধ নিতে আরসা ও যেকোনো সময় হামলা চালাতে পারে।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, পাঁচজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কক্সবাজার সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ ও রোহিঙ্গা নেতাদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাসে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে একাধিক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনায় অন্তত ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ১৭ জন রোহিঙ্গা মাঝি, ১৬ জন আরসার সদস্য, একজন স্বেচ্ছাসেবক ও অন্য ব্যক্তিরা সাধারণ রোহিঙ্গা।