নিজস্ব প্রতিবেদক,
আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনের ভোট গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
গত ২৬ মে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দের পর থেকে শুরু হয়েছে মাইকিং। দুপুর ২টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পুরো পর্যটন শহরটি টানা ৬ ঘণ্টার জন্য ৭৭ প্রার্থীর মাইকের প্রচারকর্মীদের দখলে চলে যায়।
মেয়র পদে ৫ জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সদ্য সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদকের মধ্যে। এদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান চৌধুরী এবং অপরজন নাগরিক কমিটির ব্যানারে নারিকেল গাছ প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ।
মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী অপর ৩ প্রার্থী হলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের স্ত্রী জোছনা হক (মোবাইল প্রতীক), স্বতন্ত্র প্রার্থী জগদীশ বড়ুয়া (হেলমেট প্রতীক) এবং বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলন প্রার্থী মো. জাহেদুর রহমান (হাত পাখা)।
এবারের নির্বাচনে বিএনপি-জামায়াতের কোনো প্রার্থী না থাকায় মূল লড়াই হবে আওয়ামী লীগের জেলা কমিটির সদ্য সাবেক দুই নেতাকে ঘিরে। কিন্তু নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে ওই দুই প্রার্থীকে ঘিরে দলীয় নেতাকর্মীরা বিভক্ত হয়ে ততই ‘লাগামহীন’ হয়ে উঠেছেন। এ নিয়ে নির্বাচনের স্বাভাবিক পরিস্থিতি অবনতি হওয়ার আশংকা করছে সচেতন মহল।
বিশেষ করে আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী প্রার্থী’ মাসেদুল হক রাশেদকে একাধিকবার নির্বাচন কর্মকর্তা সর্তক করে নোটিশ প্রদানের পরও আচরণবিধি লঙ্ঘন অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
এছাড়া আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণকারী নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে এবং মোবাইল ফোনে একের পর এক হুমকি প্রদান অব্যাহত রেখেছেন বলে অভিযোগ ঊঠেছে। এ ব্যাপারে বৃহস্পতিবার (১ জুন) জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগও করেছেন আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থী।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা বরাবরে দায়েরকৃত অভিযোগে বলা হয়েছে, “আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের ছোট ভাই শাহীনুল হক মার্শাল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং কায়সারুল হক জুয়েল সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান। তারা স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের পক্ষে আটঘাঁট বেধে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নেমেছে।”
জনপ্রতিনিধিত্বকারী দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে সরকারি গাড়ি ব্যবহার, সরকারি বরাদ্দ প্রকাশ্যে নির্বাচনীয় সভায় বিতরণ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের প্রবীণ এবং বিদগ্ধ রাজনৈতিক ব্যক্তিদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য ও আচরণের অভিযোগ আনা হয়েছে। এতে সরকারি ক্ষমতার অপব্যবহারের পাশাপাশি নির্বাচনী পরিবেশ ক্রমাগত সংঘাতময় হয়ে উঠার আশংকা সৃষ্টি হয়েছে।”
কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, আগামী ১২ জুন কক্সবাজার পৌরসভার নির্বাচনে মেয়র পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া মো. মাহাবুবুর রহমান মাবু জেলা কমিটির সাবেক সদ্য সাংগঠনিক সম্পাদক। সম্মেলনের পর জেলা কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ২টি পদ ঘোষণা করা হলেও এখন পর্যন্ত পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করা হয়নি।
এদিকে কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটানিং কর্মকর্তা বরাবরে বৃহস্পতিবার আচরণবিধি লংঘনের অভিযোগে একটি আবেদন করেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মাহাবুবুর রহমান মাবু।
এতে বলা হয়েছে, স্বতন্ত্র প্রার্থী রাশেদের ভাই শাহিদুল হক মার্শাল নির্বাচনী প্রচারণার কৌশল হিসেবে সরকারি গাড়ী ব্যবহার, জেলা পরিষদের বরাদ্দের চেক প্রদান করছেন। একই সঙ্গে ছোট ভাই কায়সারুল হক জুয়েল সরকারি গাড়ী ব্যবহার এবং গাড়ীতে লাইসেন্সকৃত অস্ত্র নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এই দুই ভাই নির্বাচনী সভায় প্রধানমন্ত্রীর শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে কটুক্তি এবং বরেণ্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সরকারি দলের শীর্ষ নেতাদের বিরুদ্ধে মানহানিমূলক বক্তব্য প্রদান করে নির্বাচনী পরিবেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে।
আবেদনে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান মেয়র প্রার্থী মাহাবুবুর।
কক্সবাজার পৌরসভা নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, প্রার্থী মাহাবুবের এ সংক্রান্ত একটি লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কক্সবাজার পুলিশ সুপারের নিকট পাঠানো হয়েছে।
জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম শাহাদাত হোসেন জানান, একাধিক প্রার্থী ধারাবাহিক আচরণবিধি লঙ্ঘন করছেন বলে অভিযোগ আসছে। এসব অভিযোগের সত্যতার ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদের বিরুদ্ধে একাধিক অভিযোগের সত্যতাও পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের ব্যাপারে তাকে সর্তক করে নোটিশও প্রদান করা হয়েছে।
বিভিন্ন অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে প্রার্থী মাসেদুল হক রাশেদ বলেন, ‘জনগণই আমাকে ভোটে নামিয়েছে। জনগণ ভোট দিতে পারলে আমার বিজয় কেউ ঠেকাতে পারবে না। বাবা মোজাম্মেল হকের দেখানো পথে পৌরবাসীর সেবায় থাকতে চাই। কিন্তু আমার বিজয় দেখে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নানা অভিযোগ ও অপপ্রচার চালাচ্ছে। আমি কাউকে হুমকি দিয়েছি বা আচরণবিধি লঙ্ঘন করেছি এটা তারাই প্রমাণ করুক। এটা নিয়ে আমার কোন মন্তব্য নেই।’
তিনি নির্বাচন কমিশন ও প্রশাসনকে নিরপেক্ষ অবস্থানে দাঁড়িয়ে নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘আমি গাজীপুরের মতো নির্বাচন চাই। তাহলে আমি মেয়র নির্বাচিত হব।’
কক্সবাজার জেলা নির্বাচন কার্যালয়ের তথ্য মতে, কক্সবাজার পৌরসভার ১২টি ওয়ার্ডে ভোটার সংখ্যা ৯৪ হাজার ৮০২ জন। পুরুষ ভোটার ৪৯ হাজার ৮৭৯ ও নারী ভোটার ৪৪ হাজার ৯২৩ জন। ১২টি ওয়ার্ডের ৪৩টি কেন্দ্রে ইভিএমে ভোটগ্রহণ হবে আগামী ১২ জুন।
কক্সবাজার পৌরসভার সর্বশেষ ২০১৮ সালের ২৫ জুলাই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মুজিবুর রহমান মেয়র নির্বাচিত হন। ওই নির্বাচনে বিএনপির ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে রফিকুল ইসলাম, জামায়াত সমর্থিত নাগরিক কমিটির সরওয়ার কামাল ও জাতীয় পার্টির রুহুল আমিন শিকদার মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন।