নিজস্ব প্রতিবেদক,
কক্সবাজারে টেকনাফের গহীন পাহাড়ে মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নবাদি সশস্ত্র সন্ত্রাসী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি ‘আরসা’র গোপন আস্তানা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে র ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলে অপহরণ, নির্যাতন মুক্তিপন আদায় ছাড়াও হত্যার পর মরদেহ গুম করে আসছিল। আর সেই গহীন পাহাড়ের আস্তানা থেকে ‘আরসা’র সামরিক কমান্ডারসহ ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব ১৫। এসময় ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ৭ টি দেশি-বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, গুলি ও নগদ টাকা।গ্রেফতার আরসা’র শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্প এলাকার সামরিক কমান্ডার হলো হাফেজ নূর মোহাম্মদ।
এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়
১টি ৭.৬৫ এম,এম পিস্তল, ১টি বিদেশি রিভলবার, ১টি শর্টগান, ৪টি দেশীয় এলজি, ৩টি রামদা ও গোলাবারুদসহ নগদ ৭০হাজার টাকা।
গ্রেপ্তার আরসার সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদ (২৮) কুতুপালং ক্যাম্পের দিল মোহাম্মদের ছেলে। গ্রেপ্তার হওয়া অপর ৫ আরসা সদস্য হলেন, ধলা মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ হোসেন জোহার (৩০), ওবায়দুর রহমানের ছেলে মো. ফারুক হারেস (২৩), জমলুকের ছেলে মনির আহাম্মদ (৩৬), অলি আহমদের ছেলে নূর ইসলাম (২৯), হোসেনের ছেলে মো. ইয়াছিন (২১)।
গতকাল শুক্রবার (২১ জুলাই) রাতে টেকনাফ উপজেলা বাহারছরা ইউনিয়নের শামলাপুর এলাকার গহীন পাহাড় থেকে অস্ত্রসহ তাদের গ্রেফতার করা হয়।
আজ শনিবার ১১টার দিকে কক্সবাজার র্যাব-১৫ এর কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানিয়েছেন, টেকনাফের গহীন পাহাড়টিতে আরসা সন্ত্রাসীরা গোপন আস্তানা তৈরি করে ‘টর্চার সেল’ গড়ে তুলেছিল। ওখানে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে চালানো হয় এ অভিযান।
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন জানান, আরসার গোপন আস্তানার তথ্য নিশ্চিত হওয়ার পর গহীন পাহাড়ে অভিযান চালিয়ে প্রথমে আরসার শীর্ষ সন্ত্রাসী ও কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্প এর অন্যতম সামরিক কমান্ডার হাফেজ নুর মোহাম্মদকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে অপর ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় অস্ত্র ও গুলি। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা খুন ও অপহরণসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী কার্যক্রমে জড়িত থাকার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করেছে।
সংবাদ সম্মেলনে তিনি জানান, হাফেজ নুর মোহাম্মদের ‘আরসা’র ৩০-৩৫ জন সদস্য কুতুপালং ক্যাম্প ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় খুন, অপহরণ, ডাকাতি, মাদক, চাঁদাবাজি, আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা করে থাকে। তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য তারা পার্শ্ববর্তী দেশ হতে দূর্গম সীমান্তবর্তী অঞ্চল দিয়ে অস্ত্র চোরাচালান করতো বলে জানা যায়। হাফেজ নুর মোহাম্মদ তার দলের সদস্যদের মাধ্যমে রোহিঙ্গা ও স্থানীয় জনগণের নিকট হতে খুন, অপহরণ ও গুমের ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করতো। চাঁদার অর্থ না পেলে অপহরণপূর্বক শারীরিক ও পাশবিক নির্যাতনসহ মুক্তিপণ আদায় করত। মুক্তিপণ না পেলে তারা খুন করে গহীন পাহাড়ে অথবা জঙ্গলে লাশ গুম করতো বলে জানা যায়।
তিনি জানান গ্রেফতার হাফেজ নূর মোহাম্মদ উখিয়া উপজেলার কুতুপালং ৮ নাম্বার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের বাসিন্দা। সে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্টি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) একজন শীর্ষ সামরিক কমান্ডার। সে ২০১৬ সালে ‘আরসা সদস্য আরিফ উদ্দিনের মাধ্যমে ‘আরসা’ এ যোগ দেয়। নুর মোহাম্মদ কুংফুর ব্লেক বেল্ট ধারী ও বিস্ফোরক তৈরীতে পারদর্শী। তার নেতৃত্বেই ক্যাম্পে হেড মাঝি শফি উল্লাহ্ হত্যাকান্ড, সালাম হত্যাকান্ড, সলিম হত্যাকান্ড, মালেক হত্যাকান্ড, হাবুইয়া হত্যাকান্ড, ইমান হত্যাকান্ড, আবুল মুনসুর হত্যাকান্ড, সালেহ্ হত্যাকান্ড, জোরপূর্বক একজন মহিলার ঘরে প্রবেশের সময় মহিলা বাধা দিলে তাকে গুলি করে হত্যাকান্ড এবং সাম্প্রতিক সময়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আলোচিত ৬ জন হত্যা সহ বিভিন্ন হত্যাকান্ডে সরাসরি জড়িত থাকার তথ্য মিলিছে। সামরিক কমান্ডার হাফেজ নূর মোহাম্মদের বিরুদ্ধে ক্যাম্পে হত্যা, অপহরণ, চাঁদাবাজি, মানবপাচার, মাদকপাচার ও আধিপত্য বিস্তারসহ নানা অপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। এসব অভিযোগে তার বিরুদ্ধে উখিয়া ও টেকনাফ থানায় একাধিক মামলা রয়েছে।
এব্যাপারে মামলা করে গ্রেপ্তারদের টেকনাফ থানায় সোপর্দ করার কথা জানান র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি জানিয়েছেন, ক্যাম্পে আরসার ৪ শত থেকে সাড়ে ৪ শত সন্ত্রাসী সক্রিয় রয়েছে। এদের ধরতে র্যাব অভিযান অব্যাহত রেখেছে।