বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৮তম শাহাদাৎ বার্ষিকী ও জাতীয় শোক দিবসে শ্রদ্ধা, ভালোবাসায় জাতি তাকে স্মরণ করেছে।
দিনের শুরুতে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
মঙ্গলবার (১৫ আগস্ট) সকাল ৬টা ৩২ মিনিটে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী।
এরপর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন শেখ হাসিনা। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর আরেক কন্যা শেখ রেহানা।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে কেন্দ্রীয় ১৪ দলের পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এরপর একে একে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশনাররা।
প্রধানমন্ত্রী ধানমন্ডি ৩২ নম্বর ছেড়ে গেলে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। এ সময় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মীর ঢল নামে।
বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতিতে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ আওয়ামী লীগের সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ শ্রদ্ধা জানান।
ধানমন্ডি ৩২ নম্বর থেকে প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থানে যান। সেখানে তিনি ১৫ আগস্ট নিহত পরিবারের সদস্যদের সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ এবং ফুলের পাপড়ি ছিটিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার ছোট শেখ রেহানাও ছিলেন।
এরপর প্রধানমন্ত্রী ফাতেহা পাঠ এবং মোনাজাতে অংশ নেন।
প্রধানমন্ত্রী বনানী কবরস্থান এলাকা ছেড়ে গেলে বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য সবার জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।
এরপর আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, মহিলা আওয়ামী লীগ, যুব মহিলা লীগ, শ্রমিক লীগসহ আওয়ামী লীগের বিভিন্ন সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠন, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়-অধিদপ্তর, বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বঙ্গবন্ধু পরিবারের সদস্যদের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
বেলা ১১টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে টুঙ্গিপাড়া যান শেখ হাসিনা। সেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন আওয়ামী লীগ সভাপতি।
সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতার স্থপতি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছুক্ষণ নীরবে দাঁড়িয়ে থাকেন।
এরপর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নিহতদের বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করে ফাতেহা পাঠ, দোয়া ও বিশেষ মোনাজাতে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তার ছোট বোন শেখ রেহানাসহ পরিবারের সদস্য এবং আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শ্রদ্ধা নিবেদনের পর আওয়ামী লীগ সভাপতি হিসেবে দলের শীর্ষ নেতাদের নিয়ে দ্বিতীয়বার শ্রদ্ধা নিবেদন করেন।
এ ছাড়া আওয়ামী লীগ এবং এর সহযোগী ও ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকেও বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয়।
এসব কর্মসূচির বাইরে সারা দেশে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অসহায়-দুস্থদের মধ্যে খাবার বিতরণসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন।
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনাসদস্যের হাতে সপরিবারে নিহত হন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
এদিন জাতির পিতার সহধর্মিণী বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব, তিন পুত্র- বীর মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন শেখ কামাল, বীর মুক্তিযোদ্ধা লেফটেন্যান্ট শেখ জামাল, ১০ বছরের শিশুপুত্র শেখ রাসেল, পুত্রবধূ সুলতানা কামাল ও রোজী জামাল, একমাত্র সহোদর বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ আবু নাসের, কৃষকনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, যুবনেতা বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ ফজলুল হক মণি ও তার অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রী আরজু মণি, বেবী সেরনিয়াবাত, আরিফ সেরনিয়াবাত, সাংবাদিক শহীদ সেরনিয়াবাত, সুকান্ত বাবু, আব্দুল নঈম খান রিন্টুসহ পরিবারের ১৮ সদস্যকে ঘৃণ্য ঘাতকরা এ দিনে হত্যা করে।
রাষ্ট্রপতির সামরিক সচিব ব্রিগেডিয়ার জেনারেল জামিল এবং কর্তব্যরত পুলিশের বিশেষ শাখার এএসআই সিদ্দিকুর রহমান নিহত হন। ঘাতকদের কামানের গোলার আঘাতে মোহাম্মদপুরে একটি পরিবারের বেশ কয়েকজন হতাহত হন। সে সময় দেশের বাইরে থাকায় প্রাণে বেঁচে যান বঙ্গবন্ধুর দুই মেয়ে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা।