আল্লামা সাঈদীর দাফন সম্পন্ন

0 ২৬৩

নিজস্ব প্রতিবেদক,

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে তার প্রতিষ্ঠিত পিরোজপুরের সাঈদী ফাউন্ডেশন-সংলগ্ন বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশেই দাফন করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৪ আগস্ট) দুপুর ১টার দিকে সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে জানাজা শেষে বিকাল ৩টায় তাকে দাফন করা হয়।

একই কবরস্থানে আছেন আল্লামা সাঈদীর বড় ছেলে আল্লামা রাফিক বিন সাঈদী ও তার পুত্রবধূ (রফিক বিন সাঈদীর স্ত্রী) সুমাইয়া রাফিক সাঈদী ও ছোট ভাই হুমায়ূন কবির সাঈদী।

আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে পিরোজপুরের দাফন করা হবে শুনে সকাল থেকেই হাজার হাজার ভক্ত ও জামায়াত শিবিরের নেতাকর্মী পিরোজপুর সাঈদী ফাউন্ডেশন মাঠে জড়ো হয়। বেলা ১১টার মধ্যে তা লাখে ছাড়িয়ে যায়। সকাল ১০টা ৮ মিনিটে সাঈদী সাহেবের লাশবাহী গাড়ি পুলিশ পাহারায় পিরোজপুর সাঈদী ফাউন্ডেশনের সামনে পৌঁছে। গাড়ি পৌঁছা মাত্রই হাজার হাজার তৌহিদী জনতা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে গাড়িটিকে ঘিরে ধরে। প্রচণ্ড ভীড়ে রাস্তা থেকে গাড়ি মাঠে প্রবেশ করতে প্রায় ২০ মিনিট সময় লেগে যায়। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চাপের কারণে বেলা সাড়ে ১১টার সময় কর্তৃপক্ষ দুই দফায় জানাজার নামাজ শুরু করার তাকবীর দিলেও লাখো জনতা তার ছেলে মাসুদ সাঈদী ছাড়া জানাজা নামাজ না পড়ার জন্য হাত তুলে প্রতিবাদ জানায়। পরে দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে সাঈদীর সেজ ছেলে ইন্দুরকানী উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মাসুদ সাঈদী আসার পর দুপুর ১টা ৮মিনিটে সাঈদীর জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাজায় ইমামতি করেন ভারপ্রাপ্ত আমিরে জামায়াত অধ্যাপক মজিবুর রহমান। আল্লামা সাঈদীর জানাজায় দলমত নির্বিশেষে বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষ যোগদান করেন। জানাজায় জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা আমির, শিবিরের কেন্দ্রীয় সভাপতিসহ নেতাকর্মীরা এবং পিরোজপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়কসহ নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেণ। জানাজা শেষে অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

জানাজার আগে বক্তব্যে মাসুদ সাঈদী পিরোজপুরবাসীর উদ্দেশে তার বাবা দোষী কিনা তা জানতে চাইলে সবাই তাকে নির্দোষ বলে সাক্ষ্য দেন। তিনি ছেলে হিসাবেও তার বাবাকে নির্দোষ দাবি করে সাক্ষ্য দিলেন। মাসুদ সাঈদী আল্লাহর কাছে তার নির্দোষ বাবার ওপর সরকারের জুলুম নির্যাতনের বিচার চাইলেন।

দুই কিলোমিটার লোকে লোকারণ্য
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় আগত লোকের ভীড়ে সাঈদী ফাউন্ডেশনের মাঠ, ফাউন্ডেশন ভবন ছাড়াও পিরোজপুর বলেশ্বর সেতুর ওপার থেকে সিও অফিস ও সার্কিট হাউজ মোড় পর্যন্ত লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়ে। রাস্তায় মানুষের ভীড়ে কোনো যানবাহন চলাচল করতে পারেনি।

দুই কিলোমিটারব্যাপী যানজট
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর জানাজায় অংশ নেয়া মানুষের ভীড়ের কারণে ফাউন্ডেশনের সামনের রাস্তাসহ প্রায় দুই কিলোমিটার রাস্তা লোকে লোকারণ্য থাকায় খুলনা বরিশাল বোড়ের যান চলাচল বেলা ১১টা থেকে বন্ধ হয়ে যায়। বেলা ৩টায় সাঈদীর দাফন চলাকালে রাস্তার উভয় প্রান্তে প্রায় আট কিলোমিটার যানজটের সৃষ্টি হয়।

সাঈদীর এলাকার বাস চলাচল বন্ধ
সাঈদীর নিজ এলাকা ইন্দুরকানী উপজেলায় বাস চলাচল বন্ধ ছিল। এই এলাকায় পিরোজপুর-সন্যাসী সড়কে মঙ্গলবার সকাল থেকেই বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে।

এলাকায় শোকের ছায়া
আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুতে তার জন্মস্থান পিরোজপুর ও ইন্দুরকানীতে নেমে এসছে শোকের ছায়া। সোমবার রাতে সাঈদীর মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে ইন্দুরকানীর সর্বস্তরের মানুষের মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে। লোকজন হতবিহবল হয়ে পড়ে। সাথে সাথে বাজারের দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার সকালেও ইন্দুরকানী ও ঘোষেরহাট বাজারের দোকানপাট বন্ধ থাকতে দেখা গেছে।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন মুফাসসিরে কুরআন ও পিরোজপুর-১ আসনের সাবেক এমপি আল্লামা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে মানবতা বিরোধী অপরাধের অভিযোগে আমৃত্যু কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। তিনি ২০১০ সাল থেকেই কারাগারে বন্দী ছিলেন।
রোববার বিকেলে বুকে ব্যথা অনুভব হওয়ায় তাকে প্রথমে গাজীপুর একটি হাসপাতালে ও পরে রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৪ আগস্ট সোমবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে তিনি ইন্তেকাল করেন।

রিপ্লাই করুন

Your email address will not be published.